একাত্তর সময় রিপোর্ট :
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ না হলেও বসে নেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ভোটারদের মন জয় করতে আগাম নির্বাচনী প্রচারণা ও জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি হতে নিয়মিত দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আওয়ামী পরিবারের সন্তান আনিস আহমেদ।
বর্তমান মেয়র রফিকুল আলম ওরফে জর্জ মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার পর চমক তো দূরের কথা, নূন্যতম উন্নয়নও উপহার দিতে পারেননি। এ নিয়ে স্থানীয় পৌর বাসিদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ও তীব্র অসন্তোষ রয়েছে। এমনকি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন। উন্নয়ন বঞ্চিত পৌর বাসিরা এবার আশ্বাসের বৃত্তবন্দি না থেকে কাঙ্খিত উন্নয়নের নিশ্চয়তা চান।
সেক্ষেত্রে তৃণমূলের ভোটারদের সঙ্গে সম্পর্কের সেতুবন্ধন রচনা করতে পারবেন, উন্নয়নের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারবেন অবহেলিত ছেংগারচর পৌরসভাকে, এমনই একজন প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের আলোচনায় ঠাঁই করে নিয়েছেন আনিস আহমেদ।
স্থানীয় জনসাধারণেরও মাঝেও তাকে ঘিরে রয়েছে ইতিবাচক আলোচনা। মেয়র পদে মনোনয়নের রাজনীতিতেও তিনি রয়েছেন শক্ত অবস্থানে। এসব বিবেচনায় নৌকার মাঝি হতে নিজের অপরিহার্যতার কথাই জানান দিয়েছেন আওয়ামী পরিবারের সন্তান এ প্রার্থী।
জানা যায়, ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি ছেংগারচর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে বিল্লাল হোসেন সরকার মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু দায়িত্বভার গ্রহণের ২ মাস ২৭ দিনের মাথায় ওই বছরের ১০ মে তার অকালে মৃত্যু হওয়ায় পদটি শূণ্য হয়। পরবর্তীতে একই বছরের ৭ আগস্ট উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে বিজয়ী হন রফিকুল আলম ওরফে জর্জ।অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে
নির্বাচিত হয়েই স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে পল্টি নেন রফিকুল আলম। নিজের এলাকায় অবস্থান না করে ঢাকায় বসে নিজের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এতে পৌরসভার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় ১২ জন কাউন্সিলর মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর আবেদনও করেন। কিন্তু এরপরেও একদিনের জন্য হলেও এলাকায় ফিরেননি মেয়র রফিকুল।
সূত্র মতে, আসন্ন পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় এলাকাবাসী নিজেদের পছন্দের মেয়র প্রার্থী হিসেবে এখানকার কৃতি সন্তান আনিস আহমেদকে ভোটে দাঁড় করাতে তোড়জোড় শুরু করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণাও শুরু করে দিয়েছেন তিনি। তাঁর সমর্থনে ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মীরা পৌর এলাকাসহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে পোস্টার-ব্যানার সাঁটাচ্ছেন।
পৌর এলাকার বিভিন্ন মসজিদ, কবরস্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। তাকে ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ বাসিন্দাদের মাঝে অন্য রকম এক জাগরণ তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে নিজের কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে দলীয় হাইকমান্ডেরও নজরে আসার চেষ্টা করছেন আনিস আহমেদ।স্হানীয় সাংসদ আলহাজ্ব এডভোকেট নুরুল আমীন রুহুল এবং মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কুদ্দুসের সাথে আনিস আহমেদের সুসম্পর্ক রয়েছে।
একই সূত্র জানায়, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনিস আহমেদের গোটা পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘ সময় যাবত সম্পৃক্ত। ছাত্রজীবনে তিনি নিজেও রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
তাঁর সহোদর ছোট ভাই রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের (আগের নাম সরকারি কমার্শিয়াল কলেজ) নির্বাচিত ভিপি ও সাবেক মেধাবী ছাত্রলীগ নেতা শহীদ সাঈদ আহমেদ টিপু ফ্রিডম পার্টির কিলারদের হাতে শহীদ হন।
আনিস আহমেদের সন্তান আসিফ আহমেদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থনে বিপুল ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তাঁর অন্যান্য ভাইয়েরাও
আপদে-বিপদে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে থেকেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশ্নে তারা কোনদিন আপোস করেননি। গুণী, সাহসী ব্যক্তিত্ব ও আপাদমস্তক আওয়ামী পরিবারের সন্তান আনিস আহমেদেরই শেষ পর্যন্ত চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের সম্ভাবনা প্রবল বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনিস আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয় খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ ও আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা চান আমি যেন মেয়র পদে প্রার্থী হই। আমরা দেখেছি যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে ছেংগারচর প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও এখানকার নাগরিকরা সব রকমের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমি দলীয় মনোনয়ন পেলে ছেংগারচর হবে একটি আধুনিক ও ডিজিটাল পৌরসভা।’
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নত বাংলাদেশ গড়তে দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র আমি ভোটারদের সামনে উপস্থাপন করছি। আমি আশাবাদী দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি মেয়র পদটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে পারবো।’